ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজ লাগে
ই পাসপোর্ট করতে খুব বেশি কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই। প্রায় সকল বাংলাদেশী নাগরিকই ই পাসপোর্ট করতে পারবেন। প্রথমত প্রয়োজন আপনার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি। আর যদি আপনার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তাহলে প্রয়োজন আপনার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন। ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কি এবং কিভাবে করবেন তা পূর্বের একটি লেখায় বুঝানো হয়েছে। তবে ক্ষেত্রে বিশেষ একটু ভিন্নতা আছে। তবে সকল ক্ষেত্রে জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র/ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ এর কপি।
- স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণক হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান অথবা পৌর প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব/চারিত্রিক সনদ পত্র।
- পেশাগত সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (নাবালখ/শিশুদের ক্ষেত্রে)
- পেশাগত পরিচয়পত্রের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- অনাপত্তি সনদ (সরকারি চাকুরি/স্বায়ত্বশাসিক প্রতিষ্ঠানের চাকুরিরতদের জন্য)
- স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণক না থাকলে বিদ্যুৎ বিল এর কপি।
ধরণ অনুযায়ী/ক্যাটাগরি ভিত্তিক পাসপোর্ট:
সাধারণ জনগন মূলক অরডিনারি পাসপোর্ট প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আর যিনারা সরকারি চাকুরিজীবি অথবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। যাদেন যাবতীয় দায়িত্ব সরকার অথবা ওই সকল স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করবে তাহারা মূলত কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অফিসিয়াল পাসপোর্ট করবেন।
এছাড়াও পাসপোর্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো ই পাসপোর্ট এবং আরেকটি হলো এমআরপি অথাৎ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট। তবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সকল জেলাতেই ই পাসপোর্ট সার্ভিস চালু হওয়াতে এখন খুব কম সংখ্যক মানুষই এমআরপি পাসপোর্ট করে থাকে।
ই পাসপোর্ট করার নিয়মাবলী:
ই পাসপোর্ট করতে প্রথমে আপনাকে ভিজিট করতে হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর ই পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েব পোর্টাল www.epassport.gov.bd লিংক এ। এখানে প্রবেশ করার পর প্রথমে আপনার প্রয়োজন হবে একটি সচল ইমেইল ঠিকানা। এই ইমেইল যদি আপনার না থাকে তাহলে আপনাকে একটি ইমেইল ঠিকানা তৈরি করে নিতে হবে। এরপর আপনাকে সাইন আপ নামক ট্যাব এ প্রবেশ করতে হবে। এরপর আপনার ইউজার নেম বসাতে হবে। তবে পূর্বে ব্যবহৃত কোন ইউজার নেম অলরেডি দেখালে আপনাকে কিছু লেটার বা সংখ্যা কম বাড়া করে বসিয়ে নিতে হবে। এরপর আপনার নিজের নাম আপনার ভোটার আইডি কার্ড এ যা যা আছে একদম সেরকম অক্ষর দিয়েই পূরণ করতে হবে। এরপর আপনার ইমেইল ঠিকানা দিয়ে সাবমিট করতে হবে। সাবমিট সম্পন্ন হলে আপনার ইমেইল এ একটি ভেরিফিকেশন মেইল পাঠানো। উক্ত মেইল লিংক এ ক্লিক করে আপনার একাউন্ট টি ভেরিফাই করে নিতে হবে। এরপর হলো প্রধান কাজ। এবার এ্যাপ্লাই ট্যাব এ ক্লিক করুন। তাহলে একটি ব্ল্যাংক ফরম প্রদর্শিত হবে আপনার সামনে। এরপর আপনার নিজের সকল তথ্যাদি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। এভাবে ফরমটি পূরণ শেষ হলে পরবর্তী যাওয়ার ট্যাব এ চাপ দিন। পরিবর্তী ফরম এ পূরণ হলে সকল তথ্য দিয়ে যথাযথ ভাবে ফরম পূরন শেষ করুন। এভাবে ফরম পূরণ করার সময় আপনার পূর্বের পাসপোর্ট আছে কি না একম একটি ট্যাব প্রদর্শন করানো হবে। আপনার যদি পূর্বে কোন পাসপোর্ট থাকে তাহলে হ্যা ট্যাব এ টিক চিহ্ন দিয়ে পূর্বের পাসপোর্ট নম্রটি দিয়ে সাবমিট করুন। অন্যথায় আপনি এই ফরম জমা দিতে পারবেন। অথাৎ আপনার কোন তথ্য লুকানো যাবে না। এভাবে সর্বশেষ ধাপে পাসপোর্ট এর পাতা সংখ্যা এবং মেয়াদ দেখতে পাবেন। এখানে আপনি যেটি করতে ইচ্ছুক যেটি সিলেক্ট করে সাবমিট করুন।
ই পাসপোর্ট আবেদন প্রিন্ট ও ফি:
আবেদন ফরম পূরন শেষ হলে এবার আপনি আপনার আবেদন এর প্রিন্ট সামারি নামক ট্যাব এ চাপ দিয়ে সামারি প্রিন্ট করে। প্রিন্ট সামারি ট্যাব এর পাশেই দেখবেন আবেদন ফরম ডাউনলোড নামক ট্যাব আছে। এবার আপনি আবেদন ফরম ডাউনলোড ট্যাব এ চাপ দিয়ে ডাউনলোড করে সংরক্ষন করুন এবং প্রিন্ট নিন। অথাৎ আবেদন সামরি এবং আবেদন ফরম দুটোই আপনাকে প্রিন্ট নিতে হবে। আবেদন সামারি এক পৃষ্ঠা এবং আবেদন ফরম তিন পৃষ্ঠা সর্বমোট চার পৃষ্টা প্রিন্ট নিতে হবে।
এরপর আবেদন ফি। আপনি যখন আবেদন সাবমিট করেছিলেন তখন একদম শেষ দিকে আবেদন ফি অনলাইন এবং অফলাইন নামক দুটি অপশন দেখিয়েছি। আপনি নিশ্চয় অফলাইন করেছিলেন। তাহলে আপনাকে বলবো আপনি প্রথমে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রাদি সহ পাসপোর্ট জমাদান অফিসে চলে যান। তারপর সেখানে চেকিং রুম পাস করার পর আপনার ব্যাংকড্রাফট করুন। তাহলে আপনাকে কোন ঝামেলা করতে হবে না। আর যদি আপনি অনলাইন এ আবেদন ফি সঙ্গে সঙ্গেই প্রদান করে থাকে তাহলে ফি পেমেন্ট এর ভাউচার অথাৎ রশিদ সংগ্রহ করে প্রিন্ট নিন। ব্যাস এতোটুকুই।
পাসপোর্ট ফরম জমাদানের সময় কি কি কাগজ জমা দিতে হবে:
পাসপোর্ট এর অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর যা যা সংযুক্ত করে জমা প্রদান করতে হবে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন এর ক্যানকৃত কালার প্রিন্ট কপি A4 সাইজ এর কাগজে।
- পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইমাজেন্সি কন্টাক পারসোন এর জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন এর ক্যান করা কালার প্রিন্ট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
- ইউপি চেয়ারম্যান অথবা পৌর প্রশাসক কর্তক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ এর মূল কপি।
- অনাপত্তি সনদ পত্র মূল কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
ই পাসপোর্ট আবেদন ভুল হলে করনীয়:
আপনি নিজে নিজে েই পাসপোর্ট আবেদনটি বাসায় বসে করে নিতে পারবেন। তবে আপনাকে বলবো আপনার যদি অনলাইন ফরম পূরন এর অভিজ্ঞতা একটু কম থাকে তাহলে আমি এটি করতে যাবেন না। কারণ কোন কিছু জানা না থাকলে ভুল হওয়াই স্বাভাবিক। তার চেয়ে আপনি আপনার নিকটস্থ কোন কম্পিউটার সেবা প্রদানকারী দোকানে গিয়ে এটি করুন। হ্যা এবার বলবো ভুল হলে করবেন কি। আপনি কি পাসপোর্ট করতে পারবেন না। না এমনটা ভাবার দরকার নেই। সবকিছুরই ভুল হলে তার সমাধান আছে। তাহলে নিশ্চয় এটারও সমাধান আছে। আপনার আবেদন ফরম পূরণ এর সময় যদি কোন ভুল হয় এবং আপনি সেটি জমা দিতে না পারেন তাহলে আপনাকে এটি বাতিল করতে হবে। তবে এই আবেদন বাতিল না করা পর্যন্ত আপনি আপনার ভোটার আইডি দিয়ে আর কোন আবেদন করতে পারবেন না। বাতিল করবেন কিভাবে। ভাবছেন নিজে নিজে অনলাইন আপনার একাউন্ট পেনেল এ গিয়ে বাতিল করে দিবেন। না সম্ভব না। আপনার কম্পিউটার এ পাসপোর্ট অফিস বরাবর ভুল হয়েছে মর্মে এবং ভুলের কারণ সমূহ উল্লেখ করে একটি আবেদন পত্র দাখিল করতে হবে। তাহলেই কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনটি বাতিল করে দিবে এবং আপনি পুনরায় আবার আবেদন করতে পারবেন এবং জমা দিতে পারবেন।
পাসপোর্ট কত দিনের মধ্যে হাতে পাবেন:
আপনি আবেদন করার পর কত দিনের মধ্যে আপনার হাতে পাবেন তা নির্ভর করে আপনার আবেদন ডেলিভারি ক্যাটাগরির উপর। সাধারণত নরমাল ডেলিভারি দিলে আপনি ২১ দিনের মধ্যে আপনার হাতে পাবেন। তাছাড়াও এক্সপ্রেস ডেলিভারি নামক অপশন আছে। সেটি সিলেক্ট করলে আপনার ফি এর পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যাবে। তবে এই ডেলিভারি সিস্টেম এ আপনি মাত্র ৭ দিনের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া শেষে হাতে পাবেন। ইহা ছাড়াও কর্তৃপক্ষের সংঘটিত কোন করাণে এর ২/১ দিন এদিক সেদিক হতে পারে।
আপনার পাসপোর্ট এর বর্তমান অবস্থা জানবেন কিবাবে:
এ পর্যায়ে জানবেন আপনার পাসপোর্ট এর আবেদনটি কোন পর্যায়ে আছে। ধরুন আপনি সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে নিজের ফেজ এবং ফিঙ্গার দিয়ে সেটি জমা করেছেন। কিন্তু এখন জানবেন কিভাবে আপনার আবেদন অথবা পাসপোর্টটি কতদুর আছে। এটি জানার জন্য আপনি পাসপোর্ট সার্ভার এ প্রবেশ করুন এবং চেক নামক অনশন এ ক্লিক করে প্রদর্শিত ডাটা সাবমিট করে জেনে নিন। এছাড়াও আপনি আপনার নিজের একাউন্ট প্যানেল এ প্রবেশ করে সরাসরি অবস্থা দেখতে পারবেন।
উপরোক্ত সকল কার্যক্রম সফল ভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই আপনি খুব সহজেই ই পাসপোর্ট হাতে পাবেন। এই বিষয়ে আরো জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে আপনার জিজ্ঞাসা অথবা মতামত জানাতে পারেন। আমরা যতদ্রুত সম্ভব মূল্যায়ণে ফিরবো।